প্রচন্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে সুনামগঞ্জে ও কিশোরগঞ্জের হাওরে চলছে পাকা ধান ঘরে তোলার উৎসব। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ। কৃষকরা জানান, এখন পুরোদমেই হাওরের ধান পেকেছে। শুরু হয়েছে সেই ধান কাটা, মাড়া ও শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজ।
কিশোরগঞ্জের হাওরের দিগন্ত জোড়া মাঠে এখন সোনালী ধানের সমারোহ। চারপাশ জুড়ে পাকা ধানের ঘ্রাণ। প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে কৃষকরা মেতে উঠেছেন সেই ধান ঘরে তোলার উৎসবে। ধান কাটা, মাড়াই ও শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ততা তাদের।
চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকরা। বাজারে ধানের ভালো দাম পেলে লাভের আশা করছেন তারা।
ধান কাটা মারাইয়ের এই মওসুমে হাওরই হয় কৃষকদের কয়েকমাসের ঠিকানা। প্রায় ৪৫ হাজার কৃষি শ্রমিকের অস্থায়ী ঠিকানা এখন হাওর। ফলে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। সুপেয় পানির সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এছাড়া হাওড়ে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় টেকসই ছাউনি না থাকায় আতঙ্কে থাকতে হয়। এছাড়া বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কাও রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানান জমির শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকলে কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। সুপেয় পানি ও বজ্রপাত নিরোধক ছাউনিসহ যে সমস্যা আছে পর্যায়ক্রমে কৃষকদের সব সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
এখন পর্যন্ত হাওরের ১০ ভাগ জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছে কৃষকরা। মে মাসের মধ্যে হাওরের ধান কাটা মারাই শেষ হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলায় এবার বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, কৃষকরা নির্বিঘেœ ফসল গোলায় তুলতে পারলে ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে।
সুনামগঞ্জের হাওরেও এখন চলছে অন্যরকম উৎসব। এটি কৃষকের শ্রমে-ঘামে জমিতে ফলানো সোনালী ধান গোলায় তোলার উৎসব। এ উৎসবে কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু সবাই যোগ দেন। এমনকি গ্রামের বাইরে থাকা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ছুটে আসেন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকিয়ে সেই ধান গোলায় তুলতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতা করতে। আর কষ্টার্জিত এ ধানের ওপরই নির্ভর করে হাওরের প্রতিটি পরিবারের সারা বছরের খাবার ও খরচ চলে।
ধর্মপাশা উপজেলার কালিজানা হাওরের কৃষক শফিক মিয়া, আলম মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, প্রতি বছরই যে তাঁরা এ ধান গোলায় তুলতে পারেন, ঠিক তা না। ২০১৭ সালের হাওর বিপর্যয়ের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাঁদের তাড়া করে। সে বছর হাওর থেকে একেবারে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল কৃষকদের। গত বছর নির্বিঘেœ ধান গোলায় তুলেছেন তারা। এর আগের বছর জেলার অন্তত ২০টি হাওরে ফসলহানি ঘটেছিল।